"গতকালও মা ফোন করেননি। আজ সকাল ৮টার দিকে ফোন করেছি, মা রিসিভ করেননি।
আমার মা অক্ষরজ্ঞানহীন। এক ধর্মান্ধ সমাজে বড় হয়েছেন।আমার নানা গ্রাম্য পাঠশালার পন্ডিত হওয়া স্বত্তেও মায়ের বিদ্যার দৌড় মক্তবের গন্ডি পেরিয়ে স্কুলের বারান্দায় পৌছতে পারেনি।সমাজ প্রতিবন্ধিকতায় মায়ের আর বাংলা পড়াটা হয়ে উঠেনি।
মা রাঁধতে পারেন। কুরান পড়তে পারেন। তাই ছিল মায়ের জন্য যথেষ্ট। মা যেখানে বাংলায় নামটি পর্যন্ত লিখতে পারেননা সেখানে ইংরেজি পারাটা প্রশ্নহীন। মা পারেন আরবি।
কিন্তু মোবাইলে কি আর আরবি হরফ আছে? মা জানেন না কিভাবে কল করতে হয়। মা যাতে সহজে আমাকে কল দিতে পারেন সেজন্য মায়ের মোবাইলে স্পীড ডায়াল করে দিয়ে বললাম "মা এই যে দেখা যায় 'দুই' এখানে টিপ দিয়ে ধরে রাখলে আমার নাম্বারে কল যাবে। মায়ের হাসিমাখা উত্তর, 'দুই' কোনটা এইটা কি আমি চিনিরে বাপ।
ব্লেড দিয়ে কেটেকুটে '২' বাটনটাকে চিহ্নত করে দিলাম। তারপর থেকে মা আমাকে কল দিতেন। কথা বলতাম। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে।
আমার ৪বছর বয়সের আইনস্টাইন ভাগনা মায়ের মোবাইলটাকে নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে সেটিং চ্যাঞ্জ করে ফেলে। তাই মা আমাকে আর কল দিতে পারছেন না।
আজ সকাল আটটায় যখন মাকে ফোন করি মা তখন ফোনটা রিসিভ করতে পারেননি। দৌড়ে এসে ফোনটা ধরতে না ধরতেই রিংটা কেটে গেল। আমিও কি জানি কি ভেবে আর রিডায়াল করিনি।
একটু আগে মাকে আবার ফোন দিলাম। রিংটা ডুকা মাত্রই মা ফোনটা রিসিভ করলেন।সেই সকাল আটটা থেকে এখন পর্যন্ত মা ফোনটার পাশে বসেই ছিলেন। কবে জানি খোকা ফোন দেয়, যদি আমাকে না পায়...
মন্তব্য : মায়ের ভালোবাসা কোন মন্তব্য হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন