৫ নভে, ২০১৪

সমুদ্র নিষাদ – আল মাহমুদ

কখন যে কোন মেয়ে বলেছিল হেসেঃ
নাবিক তোমার হৃদয় আমাকে দাও,
জলদস্যুর জাহাজে যেয়ো না ভেসে
নুন ভরা দেহে আমাকে জড়িয়ে নাও।
জল ছেড়ে এসো প্রবালেই ঘর বাঁধি
মাটির গন্ধ একবার ভালবেসে
জল ছেড়ে এসো মাটিতেই নীড় বাঁধি
মুক্তো কুড়াতে যেয়ো না সুদূরে ভেসে।
সে তো বলেছিলো, নীল পোশাকটি ছাড়ো
দু’চোখে তোমার সাগরের ফেনা মাখা,
আকাশের রঙ হৃদয় কি এতো গাঢ়?
গাঙচিল-মন ঢেউয়ে ঢেউয়ে মেলে পাখা!
(আমাকে তখন বললো দুলিয়ে শাখা
দূর পাহাড়ের অতিকায় এক পামঃ
গাঙচিল-মন বন্ধ করো না পাখা
ওদের হৃদয়ে কখনো এঁকো না নাম।)
স্বপ্নের মতো মেয়েটিকে বলি শোনো,
ঢেউয়ে ভেসে গিয়ে নামবো গিয়ে অথৈ তলে,
কেনো মিছিমিছি তটের বালুকা গোনো
নেমে এসো সাথে মাণিক কুড়াবো জলে।
মেয়েগো হৃদয়ে সাগরের সুরজাল
জীবন কেটেছে কত তাইফুন ঝড়ে
জলদস্যুরা করবে যে গালাগাল
জন্ম নিয়েছি জলদস্যুর ঘরে।

১৯ জুল, ২০১৪

মা-আসাদুজ্জামান আকাশ

একটু আদর, অনেক পাওয়া
একটু আদর, স্নেহের ছোঁয়া 
একটু আদর, একটু পরশ
একটু আদর, পরম পাওয়া।

এত বড় হয়েও খোকা
এনম মধুর মিষ্টি বকা 
ভালবাসার বিশাল আধার
দুহাতে জড়িয়ে রাখা।

কেন তুমি এমন করে
সুখ খোঁজ বিশ্ব জুড়ে,
সুখগুলো আমায় দিয়ে
আবার তুমি যাও উড়ে।

আমার জন্য কেন তুমি
উজাড় করে প্রান
মাঝ রাতে পাশে বসে
গাও ঘুম পাড়ানী গান।

কষ্ট দিলে তোমার মনে
মাফ করে দাও প্রতিক্ষণে
মিষ্টি মধুর হাসি হেসে
বুকে আবার নাও টেনে।

আমার কষ্টে ভাঙে তোমার হৃদয় 
আমার সুখে তোমার বিজয়
তাইতো তোমায় বিশ্ব জুড়ে
মা ডাকে মিষ্টি সুরে।

১৫ ফেব, ২০১৪

বিষ্টি - নির্মলেন্দু গুণ

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
বাতাস জুড়ে বিষ্টি,
গাছের পাতা কাঁপছে আহা
দেখতে কী যে মিষ্টি!

কলাপাতায় বিষ্টি বাজে
ঝুমুর নাচে নর্তকী,
বিষ্টি ছাড়া গাছের পাতা
এমন করে নড়তো কি?

চিলেকোঠায় ভেজা শালিখ
আপন মনে সাজ করে,
চঞ্চু দিয়ে গায়ের ভেজা
পালকগুলি ভাঁজ করে।

হাঁসেরা সব সদলবলে
উদাস করা দিষ্টিতে
উঠানটাকে পুকুর ভেবে
সাঁতার কাটে বিষ্টিতে।

আকাশ এতো কাঁদছে কেন
কেউ কি তাকে গাল দিলো?
ছিঁচকাঁদুনে মেঘের সাথে
গাছগুলি কি তাল দিলো?

সকাল গেল, দুপুর গেল-
বিকেল হ’য়ে এলো কী?
আচ্ছা মাগো তুমিই বলো
মেঘেরা আজ পেলো কী?

খেলাঘর - নির্মলেন্দু গুণ

শিশুরা খেলাঘর করে ।
তারা হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন নিয়ে
বড়দের মতো সংসার সংসার খেলে ।
তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুমভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্যখেলা ।
এক্কা-দোক্কা, গোল্লাছুট কিংবা
কানামাছি ভোঁ ভোঁ !

বড়োরাও খেলাঘর করে ।
তাদের বাসন-কোসনগুলো আকৃতিতে বড়ো,
তাদের কামনা বাসনার মতো ।
তারা তাদের খেলাঘরের নাম রাখে সংসার ।
শিশুদের মতো তারাও ক্লান্ত হয় ,
তারাও সংসার ভাঙ্গে, কিন্তু শিশুদের মতো
তারা ঘুমুতে পারে না ।

আশাগুলি - নির্মলেন্দু গুণ

জ্যা-মুক্ত হয়নি চিত্ত
অধীর মিলনে কোনোদিন ।
পরশে খুলেছে দ্বার, বারবার
কেটেছে অস্থির ঘুমে
শূন্য চিরশয্যা তুমি-হীন ।

অপক্ব মৈথুনে বিবসনা
শ্লীলতা ভাঙেনি শব্দ,
আমাদের অবিমৃষ্য যুগলযৌবন
অথচ জেগেছে কামে
সুপ্তোত্থিতে, প্রিয়তমে
মুখর মৃণালে, প্রিয় নামে ।

তোমাকে বেসেছি ভালো
তীব্রতম বেদনার লাগি ।
মৃত্যুর শিয়রে বসি
সেই প্রিয় মুখে রাত্রি জাগি
একদিন উচ্চরিত প্রার্থনার ভাষা;
করেছিনু আশা, আজ পূর্ণ হবে ।

দু’জনের ভাত - নির্মলেন্দু গুণ

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
মনে কি পড়ে না? পড়ে ।
ভালো কি বাসি না? বাসি ।
শ্লথ টেপ থেকে সারা দিন জল ঝরে,
সেই বেনোজলে এঁটো মুখ ধুয়ে আসি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
প্রেম কি জাগে না? জাগে ।
কিছু কি বলি না? বলি ।
তিতাস শিখায় যতটুকু তাপ লাগে,
অনুতাপে আমি তার চেয়ে বেশি গলি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে খেতে
আমি কি কাঁদি না? কাঁদি ।
কাঁচা কাকরুল ভাজার কবিতা লেখি,
বড়-ডেকচিতে দু’জনের ভাত রাঁধি ।

গত রাত্রির বাসী ভাত খেতে-খেতে
কিছু কি ভাবি না? ভাবি ।
ভেবে কি পাই না? পাই ।
তবু কি ফুরায় তুমি-তৃষ্ণার দাবী?
ভাত বলে দেয়, তুমি নাই, তুমি নাই ।

আমার সংসার - নির্মলেন্দু গুণ

সংসার মানে সোনার কাঁকনে জীবনের রঙ লাগা,
সংসার মানে রক্তে-মাংসে সারারাত্তির জাগা।

সংসার মানে অপেক্ষমাণ একজোড়া চোখে দাবি,
সংসার মানে সাজানো ভুবন, আঁচলের খোঁটে চাবি।

সংসার মানে অনাগত শিশু, পুতুলে সাজানো ঘর,
সংসার মানে মনোহর নেশা, ঈশানে-বিষাণে ঝড়।

সংসার মানে ব্যর্থ বাসনা, বেদনার জলাভূমি,
সংসার মানে সংসার ভাঙা, সংসার মানে তুমি।